শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইতোমধ্যে দুর্নীতি, জুয়া, মাদক, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সব যোগ্যতা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
আজ বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের চলতি বছরের প্রথম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অধিবেশনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় রাষ্ট্রপতি প্রবেশ করেন। এ সময় বিউগলে তার আগমনী বার্তা বেজে ওঠে। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ সকল সংসদ সদস্য দাঁড়িয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। সম্মান প্রদর্শন করেন সংসদ গ্যালারিতে উপস্থিত দেশি-বিদেশি অতিথিরাও। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে স্পিকারের পাশে রাখা আসনে বসেন এবং ভাষণ দেন। টানা সোয়া এক ঘন্টা ভাষণের পর রাষ্ট্রপতি অধিবেশন ত্যাগ করেন। এরপর স্পিকার আগামী ১৩ জানুয়ারী বেলা ৪টা পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন মূলতবি করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপতি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দু। জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। তাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সকলকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।
সংসদে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উলেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, হলি আর্টিজান হামলা মামলা, নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় দ্রুত ঘোষণা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সেই পথেই বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরো সামনের দিকে, ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। আমি দূঢভাবে আশাবাদি সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সকল স্তরে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে সক্ষম হবো।
রাষ্ট্রপাতি আবদুল হামিদ বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অজিত গৌরেবোজ্জল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জল রাখতে দেশ থেকে দুনীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরুপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাঙালি জাতিকে আরো ঐক্যবব্ধভাবে কাজ করতে হবে। একাত্তরের শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। তাই ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নিবিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।